”আর কতো লিখলে আমি কবি হবো”

 

কামনা ইসলাম। লোহাগড়া, নড়াইল

এখনও না-কি আমি কবি হতে পারিনাই।
লিখলাম আকাশ, বাতাস, মাটি, পাখি, ফুল,ফল কত্ত কিছুকে নিয়ে ।
তবুও আমি কবি হতে পারলাম না।
বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের মুখ দেখার জন্য অধির আগ্রহ নিয়ে রাস্তার ধারে অপেক্ষায় বসে থাকা মায়ের কথা গুলি লিখলাম।

অবুঝ শিশুটি বাবাকে হারিয়ে চিৎকার করে কাঁদছে তার কথা লিখলাম।
রাবেয়ার পঙ্গু স্বামী বিছানায় ছটপট করে কাঁদছে, ভাত খাবে, আর রাবেয়া দ্বারে দ্বারে ঘুরছে একমুঠো ভাতের জন্য, তাদের দুঃখের কথা গুলিও লিখলাম।

যে ছেলেটা অপারেশনের টেবিলে মারা গেলো তার কথাও লিখেছি।
চাষিবউ, বৃষ্টি রাণী, মালতী, মাধবী, নীলাঞ্জনা, নিলীমা সবার কথা লিখেছি।

লিখেছি বেকার ছেলে গুলো কিভাবে কাজের সন্ধানে ছুটছে।

লিখেছি বৃদ্ধ বাবার পকেট শুণ্য,ঔষধ নেই, চশমাটা ভেঙে পড়ে আছে, দুইশো টাকার জন্য মাসের পর মাস ছেলের টাকা পাঠানোর অপেক্ষায় থাকার কথা,
তবুও আমি কবি হতে পারিনাই।

বিশটি বছর ধরে লিখছি, আর কি লিখলে আমি কবি হতে পারবো?

দূর্বাঘাসের শিশির সিক্ত ভোর, খরচৈত্রের খরতা,বৈশাখী মাতাল হাওয়া, ফাগুনের ঝরাপাতা, আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টি।
শ্রাবণের ভেসে চলা সাদা কালো মেঘের লুকোচুরি খেলা।
হেমন্ত এলো বুঝি ওই পৌষের শীতলা।

আর কি লিখতে হবে আমাকে কবি হতে হলে?
লিখেছি নয়নের ফিরে আসা, দূর বহুদূর থেকে একটু ভালোবাসা।
চন্দ্রনাথ এখনও জেগে থাকে, খোলা আকাশের গায়ে। লালিতার পায়ে বাজে মল ঝনঝন শব্দে জঙ্গলের কোণায়।

আর কতো লিখলে আমি কবি হবো?
বাসন্তী নামের মেয়েটি অসুস্থ ছিলো, তাকে ফেলে রেখে চলে গেলো নির্মল।
বারো বছরের প্রেম, তারপর বিয়ে।

পদ্মফুলের পাপড়ির মতো সেই সোনালি, এখন ওর শরীরটা ঝলসে গেছে, অভাব আর অভাব তাও লিখলাম কাগজের পাতা ভরে, তবুও আমি কবি হতে পারিনি।

সমুদ্রের কিনারায় দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম প্লেনগ্রাস, কতো শতো মানুষের আহাজারি, ক্ষত-বিক্ষত রক্ত ঝরা শরীর।
বাস,ট্রেন, সিএনজি, আটো কতো দুর্ঘটনা।

দূর্নীতিবাজ মানুষ গুলো কিভাবে ঠকিয়ে চলছে, সাধারণ নিরীহ মানুষদের সে কথা গুলোও যত্ন করে ডায়েরীর পাতা ভরে লিখে রেখেছি।

বৃদ্ধাশ্রমে কাঁদছে আর কাঁদছে, বড়ো বড়ো অফিসার সাহেবদের পিতামাতা।
নদীতে লাফ দিলো আর ফিরে এলোনা মধুমিতা।
লিখেছি বিজয় দিবস, শহীদ দিবস, স্বাধীনতার মর্মকথা।

স্বর্ণের মুকুট পরে ছিলো যে রাজা, সে শুনতে পাইনি তখন গরীব দুঃখী মেহনতী মানুষের অভাবের কথা।
তাকে নিয়েও লিখলাম। মন ভরে লিখলাম ।
তবুও হতে পারলাম না কবি,
তাই বিদায় নিলাম এবার, রয়ে গেলো অন্তরে শুধু একটু ব্যথা।